আধুনিক যেকোনো শিল্পকারখানায় পরিকল্পনা মোতাবেক দ্রব্য উৎপাদন করা, উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করা, শিল্প দুর্ঘটনা রোধ করা, সর্বোপরি শিল্পকারখানাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পক্ষে সংগৃহীত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কারখানায় স্বাস্থ্যসম্মত উপযুক্ত আলোক ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন ।
🔳 প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন কী ?
ভেন্টিলেশন হলো গৃহাভ্যন্তরের বাতাস বের করে দিয়ে সতেজ বাতাস প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ফলে ঘরে সব সময় বায়ু চলাচল থাকে। উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ু চলাচল গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ক. আলোক ব্যবস্থা (Lightening) : প্রতিটি শিল্পকারখানার জন্য আলোক ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারখানায় নিরাপত্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে উপযুক্ত আলোক ব্যবস্থা থাকা একান্ত জরুরি। উপযুক্ত আলোক ব্যবস্থা কারখানায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়তা করে, কারখানার উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়, উৎপাদনে সঠিক মান বজায় থাকে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের চোখের কোনো ক্ষতি হয় না।
১৯৬৫ সালের কারখানা আইন ও ১৯৭৯ সালের কারখানা বিধিমালায় আলোক ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে—
১. শ্রমিকরা কারখানার যে সমস্ত অংশে কাজ বা যাতায়াত করে সেখানে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বা উভয়ের সমন্বয়ে প্রচুর আলোক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. কর্মস্থলে ঘরের আলোর জন্য ব্যবহৃত সমস্ত চকচকে জানালা বা সূর্যের আলো আসার পথসমূহ ভেতর ও বাহির উভয় পার্শ্বেই যথাযথভাবে পরিষ্কার ও প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
৩. প্রতিটি কারখানায় সরাসরি বা চকচকে অংশে প্রতিফলিত হয়ে আসা চোখ ধাঁধানো আলো কিংবা ছায়া (যা চোখকে পীড়া দেয় বা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে) প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এছাড়া-
১. উত্তম ইলুমিনেশন শিল্পকারখানা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
২. অপর্যাপ্ত ইলুমিনেশন দুর্ঘটনার একটি বিশেষ কারণ।
৩. অতি উজ্জ্বল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর, কেননা এটি উত্তম আলোকিতকরণ নীতির পরিপন্থি।
৪. ত্রুটিপূর্ণ আলোকব্যবস্থা কর্মীগনের দৃষ্টিশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।
৫. অপর্যাপ্ত আলোক ব্যবস্থায় কর্মী সূক্ষ্ম আকারে দ্রব্যাদি ঠিকমতো দেখতে পায় না এবং পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়।
খ. বায়ু চলাচল (Ventilation) : যেকোনো খোলা স্থানে কোনো ম্যাটেরিয়াল স্থানান্তর বা প্রসেস করা হলে উক্ত ম্যাটেরিয়াল বা তাদের উপজাত থেকে দূষিত কিছু দ্রব্য। যেমন— ধুলাবালি, গ্যাস, বাষ্প, ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো বায়ুমণ্ডলকে কলুষিত করে পরিবেশকে করে অস্বাস্থ্যকর। শিল্পকারখানা থেকেও অনুরূপ দূষিত পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা সরাসরি শ্রমিক-কর্মীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসম্মত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যবস্থাদিও থাকতে হবে। নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণের মাধ্যমে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত শিল্প গড়ে তোলা যায় ।
১. আদর্শমানের হাউজকিপিং করে।
২. এগজাস্ট ভেন্টিলেশন লাগিয়ে।
৩. অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে।
৪. অপারেশন বা প্রসেস পরিবর্তন করে।
৫. রেসপিরেটরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে ।
৬. বিল্ডিং বা যন্ত্রপাতির ডিজাইন পরিবর্তন করে।